ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। এবার যাত্রার পালা সামনে। গতকাল দেয়া হয়েছিল ১৫ই জুনের অগ্রিম টিকিট। তবে রোজা ৩০টি হলে আগামী ১৬ই জুন বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেন চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী। তিনি বলেন, গতকাল ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন ছিল। তবে রোজা যদি ৩০টি হয় অর্থাৎ ১৭ই জুন ঈদ হয়; তাহলে আগামী ১৬ই জুন বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেন চালু থাকবে।
১৫ তারিখ এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে কতটি ট্রেন চলবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশেষ ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। যেমন তিস্তার টিকিট নেই। এর বিপরীতে দেওয়ানগঞ্জের বিশেষ ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ঈদের অগ্রিম টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা।
টিকিট কাউন্টারের সামনে থেকে শুরু করে মানুষের এই লাইন গিয়ে ঠেকেছে মূল সড়কের কাছাকাছি। রাত থেকে অপেক্ষমাণ টিকিট প্রত্যাশীদের পদচারণায় স্টেশন এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। স্টেশনে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। টিকিট কাউন্টার থেকে জানানো হয়, একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন। ঈদ উপলক্ষে বিক্রীত টিকিট ফেরতযোগ্য নয়। সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা ট্রেনে কোনো আসনবিহীন টিকিট ইস্যু করা হবে না। অন্যান্য ট্রেনের ক্ষেত্রে শুধু যাত্রীদের অনুরোধে যাত্রার দিন আসনবিহীন টিকিট ইস্যু করা হবে। এদিকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে অনলাইনে ঈদের অগ্রিম ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন ফয়সাল আহমেদ। নির্ধারিত দুই দিনে আগামী ১৩ ও ১৪ই জুনের টিকিট অনলাইনে কাটতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কিন্তু ঈদ উদযাপনে তো বাড়ি যেতেই হবে। তাই ভিন্ন পথ না পেয়ে বাধ্য হয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসেছেন তিনি। কমলাপুরে সকাল ৮টা থেকে ২৬টি কাউন্টারে আগামী ১৫ই জুনের টিকিট বিক্রি হচ্ছিল। সেহরির পর থেকে রাজশাহীগামী ট্রেনের টিকিটের কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন ফয়সাল। তিনি বলেন, দুইদিন একই অবস্থা হয়েছে। অনলাইনে টিকিট ইস্যু হওয়ার কথা সকাল ৮টায়। সেভাবেই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে বসে ছিলাম। ৮টা বাজার সঙ্গেই সঙ্গে চেষ্টা করতে থাকি, কিন্তু সাইটেই ঢুকতে পারছিলাম না। সার্ভার বিজির কারণে সেই সময় সাইটটি ব্যবহার করতে পারছিলাম না। কিন্তু পরবর্তীতে যখন ঠিক হলো, তখন টিকিট শেষ। পরপর দুইদিন একই রকম অবস্থার মধ্যে পড়েছি। তিনি বলেন, তাই বাধ্য হয়ে স্টেশনে এসেছেন। তিনি বলেন, অনলাইনে টিকিট বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও যদি সাধারণ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে কিনতে না পারে, তাহলে অনলাইনে দিয়ে কী লাভ? যুগটাই এখন অনলাইনের, তাই অনলাইনের সেবা বৃদ্ধিসহ অনলাইনে টিকিটের সংখ্যা আরো বাড়ানোর সময় এসেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। আরেক টিকিট প্রত্যাশীও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ঈদের অগ্রিম টিকিটের জন্য অনলাইনে আমার অনেক বন্ধুরাও চেষ্টা করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত পায়নি। অনলাইনে টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, অনলাইনে টিকিট পাচ্ছে না-এ অভিযোগ ঠিক না। কারণ, যারা অনলাইনে টিকিট কাটেন, তারা সেই টিকিটটি প্রিন্ট করে মূল টিকিট সংগ্রহের জন্য আমাদের এখানে আসেন।
তো স্বাভাবিকভাবে তারা তো আসছেনই, তাহলে অবশ্যই অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন। তিনি বলেন, এছাড়া অনলাইনে ২৫ শতাংশ আগ্রহীরা সার্ভারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট কাটতে চেষ্টা করেন। একই সময়ে অনেকজন একসঙ্গে সাইটে প্রবেশ করায় সার্ভার বিজি হয়ে যায়। আর টিকিটের প্রতি সবার চাহিদা থাকে, যে কারণে সবাই চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে পেয়ে যান। আর অনলাইনে টিকিট সংখ্যা নির্দিষ্ট, তাই সবাই টিকিট পান না। উল্লেখ্য, ১লা জুন থেকে শুরু করে ৬ই জুন ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন বিক্রি করেছে ২৩ হাজার ৫১৪টি টিকিট। যারা ১লা জুন টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারা আগামী ১০ই জুন ঈদ যাত্রা করবেন।